-->
seo-expert-in-bd-imam-uddin-imamuddinwp

জাকের হোসেন সুমন

ওয়েব ডিজাইনার | লেখক

লাবণ্য - দস্যি মেয়ে

লাবণ্য - দস্যি মেয়ে

চরিত্র:

জয়
লাবণ্য
জয়ের ছোট বোন মারিয়া
জয়ের মা-বাবা
লাবণ্যের মা-বাবা
রিকসাওয়ালা
বাদাম ওয়ালা
লোকজন

এটি একটি কাল্পনিক প্রেমের গল্প। এর সকল চরিত্র কাল্পনিক।

শুরু

বিকেল বেলা, রমনাপার্ক এর একদম মাঝের যে পুকুর টা আছে সেটার পূর্ব পাশে একটা বেন্চে বসে আছে। পুকুরের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে। সামান্য বাতাস ছিল বলে পুকুরের পানিতে ছোট ছোট ঢেউ উঠছে। সে ঢেউ গুলোতে সামান্য সূর্য কিরন লেগে একদম অসাধারন লাগছে। পড়ন্ত বিকেলের এই সামান্য রোদের চমক মনের মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগার সৃষ্টি করেছে। জয় বসে বসে এই ভালো লাগা অনুভব করতেছে। মনের অজান্তে গুনগুন করে আবার গান ও গাইছে। এমনিতে জয়ের গানের গলা অসাধারন। তবে সে সবসময় একা একা থাকে। দরকার ছাড়া কারো সাথে তেমন কথা বলে না। ছোটবেলা থেকেই সে এমন শান্ত স্বভাবের আর সবার থেকে আলাদা। ওর হাতেগোনা কয়েকজন বন্ধু আছে কেবল। মাঝে মাঝে তাদের সাথে আড্ডা দিতে যায়। খুব ভালো বেতনের ভালো চাকুরী করে সে। আজ অফিসের কাজ দুপরেই শেষ করে ফেলেছিল একটা মিটিং আছে বলে। কিন্তু শেষমেশ মিটিং পিছিয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। সেগুনবাগিচায় একটা ফ্ল্যাট চার মাস আগে ভাড়া নিয়েছে। আগে থাকত উত্তরা। এখন কাকরাইল এর একটা অফিসে চাকুরী হওয়াতে এখানে চলে এসেছে। ওর পরিবারে মা,বাবা আর একমাত্র ছোটবোন আছে। খুব সুখী পরিবার। বাবা সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর। এখন বয়স প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। কিন্তু দেখলে মনেই হয়না এত। মা গৃহিণী। বোন এইবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ইংরেজিতে ভর্তি হল। পরিবার এর সবাই উচ্চশিক্ষিত।


কতক্ষণ সেখানে বসেছিল তার মনে নেই। হঠাৎ করে একটা মেয়ের গলার আওয়াজে তার সম্বিত ফিরে এলো। বাবারে বাবা গলাতো নয় যেন, লড়ির হর্ণ। হঠাৎ করেই বেঝে উঠেছে।
জয় পেচনে ফিরে লাবণ্য কে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। এমনিতে জয় খুব স্মার্ট কিন্তু এই মেয়েটার সামনে পড়লে খুব নার্ভাস ফিল করে।) (লাবণ্য হল জয়দের ফ্ল্যাট এর মালিকের মেয়ে। খুবই দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। খুব সুন্দরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ে এখন। থাকে জয়দের সামনের ফ্ল্যাটেই। ঐ বাড়িতে লাবণ্য দের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। একটি জয়ের বাবা ভাড়া নিয়েছে। জয়ের বাবা আবার লাবণ্য এর বাবার পরিচিত)

লাবণ্যঃ  Excuse Me Mr Joy Gopal. (লাবণ্য জয়কে দেখলে "জয় গোপাল বলে ডাকে")

জয়ঃ জ্বী আপ---নি (একটু তোতলিয়ে) কখন এলেন?

লঃ আসলাম তো অনেকক্ষন হল। এসে দেখতেছি আপনি একদম দেওয়ানা হয়ে বসে আছেন। কী ব্যাপার? মন কোনদিকে আবার?

জঃ কি যে বলেন আপনি। এমনি বসে আছি আরকি?
লঃ (রেগে)  ওই আপনাকে না কতদিন বলছি আমি আপনার ছোট, আমাকে তুমি করে বলবেন।
জঃ চমকে উঠল। (মনে মনে বলল, এই পিচ্ছি মেয়েটা কি করে এতজোরে ধমকি দেয়?) কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

জয় চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকল।

লঃ কি ব্যাপার বিড় বিড় করে কি বলতেছেন? মুখে কথা বলতে কি কেউ নিষেধ করছে?

জয়ঃ না না। নিষেধ করবে কে? কি বলব আপনাকে?

লঃ (চোখ রাঙিয়ে) আবার আপনি বলতেছেন? আমাকে তুমি করে বলবেন। বুঝলেন?

জয়ঃ জ্বী।

লঃ বেন্চের মাঝখানে বসে আছেন কেন? একপাশে সরুন।

জয় এবার উঠে যাচ্ছে। লাবণ্য বসে জয়ের হাত চেপে ধরে টেনে বেন্চে আবার বসালো।

লঃ কী ব্যাপার উঠে যাচ্ছিলেন কোথায়? আমার এখানে একা বসে থাকতে ভয় করবে না। আর আমি একা বসে বসে এখানে করবটা কী হুঁ?

লাবণ্যর কথা শুনে জয়ের হাসি পেল কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই ভয়ে হাসি চলে গেল। সে মনে মনে বলল এই মেয়েটা কি আবার ভয় ও পায়?

জয়ঃ আপনি না স্যরি তুমি বসে থাক আমি আসি।

লঃ না। (ধমকের সুরে) আপনি ও আমার পাশে বসে থাকুন। উঠলে খবর আছে বলছি। বসুন।

জয় এবার ভয় পাওয়ার মত করে চুপ হয়ে বসে রইল।
জয়ের এই অবস্থা দেখে লাবণ্যর অনেক হাসি পেল। জয়কে বিব্রত হতে দেখলে লাবণ্যর কাছে মজা লাগে।

জয়ঃ একপাশে বসে আছে চুপ করে। কিছুটা বাতাস বইছে কিন্তু সে বাতাসে ও জয় ঘামছে।

লঃ কি ব্যাপার আপনি চুপ কেন? এখানে কি আপনার চেহারা দেখতে বসেছি। কথা বলুন। চুপচাপ বসে থাকতে আমার ভালো লাগে না। কিছু বলুন।

জয়ঃ কি বলব?

লঃ কি বলবেন মানে? আপনাকে কি শিখিয়ে দিতে হবে নাকি?

জয়ঃ আসলে আমি বুঝতে পারছিনা যে কি বলব?

লঃ আপনার মাথা বলবেন। আমার নাম জিজ্ঞাসা করুন, আমি কি করি, কি পছন্দ করি, ভবিষ্যৎ এর লক্ষ্য কি এগুলো জিজ্ঞাসা করুন।

জয়ঃ এগুলো তো আমি জানি।

লঃ কি জানেন?

জয়ঃ তোমার নাম, কি কর এগুলো।

লঃ আর আমার পছন্দ কি, আমার লক্ষ্য কি এগুলো জানেন না কেন?

জয়ঃ এগুলো ও কি জানতে হবে?

লঃ (রেগে) হবে ই তো।

জয়ঃ (ভয়ে) কেনো?

লঃ কেনো সেটা পরে দেখা যাবে। এখন চুপ হন। বেশি কথা বলেন খুব। (মুচকি হাসবে)

জয় আবার ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যাবে।

বাদাম ওয়ালা আসবে বাদাম নিয়ে,

বঃ মামা বাদাম দিবো?  আপুর জন্য বাদাম দেই।

জয়ঃ (বাদাম ওয়ালা কে) এই আমি তোমার মামা আর উনি বুঝি তোমার আপা হয়?
(এই কথা বলার সময় লাবণ্য এর দিকে চোখ পড়বে এবং আবার চুপ হয়ে যাবে।)

লঃ কি ব্যাপার আবার চুপ হয়ে গেলেন যে? বাদাম কিনে দিন, বাদাম খাবো।

জয়ঃ এই বাদাম দাও তো ১০ টাকার।

বাদাম ওয়ালাঃ নেন মামা।

জয়ঃ মানিব্যাগ বের করে দেখবে কোনো খুচরো টাকা নেই, শুধু ৫০০ টাকা আর ১০০০ টাকার নোট আছে কয়টা।

জয় একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে দিলো।

ব-ওঃ মামা এত টাকা তো ভাংতি নাই আমার কাছে। 

জয়ঃ তাহলে এখন কি করবো?

বঃ কি করবেন?

জয়ঃ (হতাস হয়ে) তাহলে নিয়ে যাও।

লঃ (জয়কে) কি ব্যাপার ফিরিয়ে দিচ্ছেন কেনো?

জয়ঃ Sorry. আমার কাছে ভাংতি টাকা নেই।

লঃ এসবে কাজ হবে না। আমার থেকে ধার নিন। পরে ফেরত দেবেন আবার।

জয়ঃ কিছুক্ষণ লাবণ্য এর দিকে তাকিয়ে (মনে মনে বল্ল, কি মেয়েরে বাবা ধার দিয়ে হলে ও খাবে) আর মুখে বল্ল আচ্ছা দিন।

(বাদাম ওয়ালা কে টাকা দিয়ে বিদায় করল)

বাদাম এর প্যাকেট টা লাবণ্যএর হাতে দিতে ই লাবণ্য চেছিয়ে বল্ল আমার হাতে কেনো দিতেছেন?  আমাকে বাদাম ভেঙে না দিলে আমি তো খেতে পারিনা। আপনি একটা একটা করে ভেঙে আমাকে দিন। খবরদার আপনি যদি একটা ও খেয়েছেন তবে আপনার খবর আছে।

(জয় এই কথা শুনেই চমকে উঠল।  কি বলে এই মেয়ে। আমি একে এখন বাদাম ভেঙে খাওয়াবো মাথা খারাপ আমার।)

জয়ঃ দেখুন আমি পারব না। আপনি ভেঙে খান।

এইকথা বলতেই,
লাবণ্য চোখ রাঙিয়ে জয়ের দিকে তাকালো। জয় আর কিছু না বলে একটা একটা করে বাদাম ভেঙে দিতে লাগলো লাবণ্য এর হাতে। আর লাবণ্য খাচ্ছে এবং মুচকি মুচকি হাসছে।

এক সময় সন্ধ্যা হয়ে এলো। অনেক্ষন দুজনের কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যা হতেই,
লাবণ্যঃ এই যে Mr Joy Gopal পার্কে বসে আড্ডা দেয়া হচ্ছে এই রকম একটা সুন্দরী মেয়ে নিয়ে। যান তাড়াতাড়ি বাসায়।

জয়ঃ আমি তো চলে যেতেই চেয়েছি। আপনি তো যেতে দেননি।

লাবণ্যঃ আপনি তো অনেক বেশি কথা বলেন।

জয় আর কিছু না বলে পেচনের দিকে না তাকিয়ে হাটতে লাগলো।
পার্ক এর গেট দিয়ে বের হয়ে যখন রিক্সা ডাক দিলো তখন,
লাবণ্য বলে উঠলো ভাংতি টাকা আছে?

আবার লাবণ্য এর গলা শুনে জয় চমকে উঠলো। সে এতক্ষণ খেয়াল ই করে নি যে লাবণ্য তার পিচন পিচন আসতেছে। হঠাৎ তার মনে হলো তার কাছে তো খুচরো নেই। সে তখন লাবণ্য এর দিকে তাকালো।
লাবণ্য আগে থেকেই হাতে একটা ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে ধরে আছে।
জয় কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে টাকা টা নিলো। তারপর রিক্সায় উঠে চলে গেল। এরপর লাবণ্য ও আরেকটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলো।

কয়েকদিন পর,

সন্ধ্যায় জয় অফিস থেকে আসছিল।  রমনাপার্ক এর পাশ দিয়ে হেটে হেটে। হঠাৎ করে কে যেন ডেকে উঠল এই যে মিঃ জয় গোপাল। গলাটা পরিচিত মনে হলো। দাড়িয়ে পেচনে তাকাতেই দেখলো লাবণ্য রিক্সায় বসে ডাকছে। জয় দেখলো রিক্সা তার দিকেই আসছে। সে একটু বিব্রত হলো, না জানি এই মেয়েটা আজ কি করে? রিক্সা এসে তার সামনে থামলো। দেখলো লাবণ্য একটা লাল রঙের জামা পড়ে রিক্সায় বসে আছে। জয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। লাবণ্য এমনি তেই অনেক সুন্দরী তার উপর লাল জামায় তাকে পরীর মত দেখাচ্ছে। জয় ভাবলো মানুষ এত সুন্দর হতে পারে?
হঠাৎ লাবন্যর সেই লড়ি মার্কা চিৎকার। কি ব্যাপার  শুধু কি তাকিয়েই থাকবেন  নাকি রিক্সায় উঠবেন।

জয়ঃ না, না। আমি হেটেই যেতে পারবো।

লাবণ্যঃ কিসের না না। রিক্সা ভাড়া বাচানোর ফন্দি না। আমি বুঝি না কিছু? নাকি আজকে ও ভাংতি নেই। আর কি ব্যাপার ধার নিলে পরিশোধ করতে হয় জানেন না?

জয়ঃ চি চি। কি বলেন? আমি সবসময় সন্ধ্যায় হেটেই বাসায় যাই। এছাড়া আর হাটার সময় পাই না তো তাই।

লাবণ্যঃ হয়েছে হয়েছে। আর সাফাই গাইতে হবে না।  উঠুন তাড়াতাড়ি।

জয়ঃ না। তুমি যাও। আমি আসতে পারব।

লাবণ্যঃ ওই আপনি এতো বেশি কথা বলেন কেন? আসতে বলছি আসুন।

জয় যখন লাবণ্যএর রিকশা এর কাছে আসল তখন হঠাৎ লাবণ্যর হাতের নাগালে আসতেই সে জয় এর শার্ট এর কলার চেপে ধরে রিক্সায় টেনে তুলল। আচমকা জয় ভয় পেয়ে গেলো। মনে মনে জয় বলল, এ তো খুব সাংঘাতিক মেয়ে।

জয় চুপচাপ রিক্সায় বসে রইল। লাবণ্য জয়ের একটা হাত টেনে নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখল। জয় হাত সরিয়ে নিতে চাইলে,

লাবণ্যঃ (ধমকে) এই কি ব্যাপার সোজা হয়ে বসে থাকুন। না হলে রিক্সা থেকে ফেলে দিবো।

জয় এবার আর কিছু বলল না। ভাবল এই মেয়ের সাথে পেরে উঠা যাবে না। তার চাইতে চুপচাপ বসে থাকি তাহলে অন্তত ধমক খেতে হবে না। এই পিচ্চি মেয়ের হাতে ধমক খেলে মানুষ কি বলবে?

রিক্সায় আর দুজনে কোনো কথা বলল না। জয় তো ভয়ে ই অস্থির।  আর লাবণ্য শুধু চুপিচুপি হাসছে।
রিক্সা এসে বাসার সামনে থামল। জয় নেমে গেলো আগে। নেমে লাবণ্য এর দিকে তাকাতেই

লাবণ্য বললঃ তাকিয়ে আছেন কেন? একটা মেয়ের সাথে একি রিক্সায় আসলে ভাড়া ছেলেটাকে দিতে হয় জানেন না বুঝি?  নাকি খুচরো নেই আজকেও।

জয় আর কিছু না বলে রিক্সা ভাড়া পরিশোধ করল।

এবার আবার লাবণ্য চেছিয়ে বললঃ কি ব্যাপার আমি কি রিক্সায় বসে থাকব নাকি? আমি একা একা উঠতে পারি কিন্তু নামতে পারি না তো। আমার হাত ধরে নামান আমাকে।

জয়ঃ (মনে মনে বলল, এই মেয়ে এত জোরে জোরে ধমক দেয় আর রিক্সা থেকে নামতে পারে না এই কথা কোনো গাধা ও বিশ্বাস করবে না।)

জয় আর কিছু না বলে লাবণ্য কে নামানোর জন্য লাবণ্য এর হাত ধরতেই লাবণ্য নিজে নিজেই নেমে গেলো। জয় এখন আর বিস্মিত হল না। কারন সে জানে এই মেয়ে বড় মাপের ফাজিল। নেমে লাবণ্য সোজা হেটে বাসার ভেতর চলে গেলো। একবার ও পেচনে তাকালো না। জয় ও তার পিচন পিচন চলে গেল। লাবণ্য এসে আগে ঘরে ডুকে গেল? জয় ঘরের কলিং বেল বাজাতেই জয়ের বোন মারিয়া এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলেই দেখলো মারিয়া হাসছে। জয় ঘরে ডুকল। মারিয়াকে হাসতে দেখে,

জয়ঃ কি ব্যাপার হাসছিছ কেনো রে আপু?

মারিয়াঃ ভাইয়া আমি সব দেখেছি।

জয়ঃ কি?

মারিয়াঃ কি, তুমি আজকে লাবণ্য আপুকে সাথে নিয়ে রিক্সায় করে বাড়ি এসেছো। আম্মুকে বলবো?

জয়ঃ এই না না। আসলে তুই যা ভাবছিস তা না। আসলে ওই মেয়েটাই আমাকে জোর করে রিক্সায় তুলে নিয়ে এসেছে। আমি আসতে চাইনি।

মারিয়াঃ আমি কিছু বুঝিনা? আমাকে এখনো ছোট মনে করো তুমি? আমি আম্মুকে এখনি বলতেছি, আম্মু আম্মু দেখো ভাইয়া.........

জয় মারিয়ার মুখ চেপে ধরল।

জয়ঃ এই কি করছিস? আম্মুকে ডাকছিস কেন?  আম্মুকে ডাকিস না আপু। বল আমাকে এর জন্য কি করতে হবে?

মারিয়াঃ কিছু না। তবে লাবণ্য আপুকে আমার অনেক ভালো লাগে। তাকে আমার ভাবি বানিয়ে দিতে হবে।

জয়ঃ তবে রে। আমার আপু তো অনেক পেকে গেছে দেখছি। দাঁড়াও আগে আমি আমার আপুর একটা ব্যবস্থা করি।

মারিয়াঃ আমার জন্য কেবল লাবণ্য আপুকে ভাবি বানালেই হবে আর কিছু না, বুঝলে?

জয়ঃ হুঁ

জয় ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলো। রাতে এক সাথে সবাই মিলে ডিনার করলো। জয় আজ অনেক ক্লান্ত তাই একটু তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে  জানতে পারল আব্বু-আম্মু দাদুর বাড়ি যাবে। জয়ের দাদুর বাড়ি টাঙাইল এর মির্জাপুর এ। জয়রা মাঝে মাঝে যায়। ২ দিন ওরা ওখানে থাকবে। উনাদের সাথে মারিয়া ও যাচ্ছে। জয়ের অফিসে কাজ আছে বলে যেতে পারছে না। তাই সে ঢাকায় থেকে যাচ্ছে।

পরদিন সকালে সবাই একসাথে বের হল। মা বাবা রা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হল আর জয় চলে গেল অফিসে।
অফিসে আজ একটা বড় ড্রিল ফাইনাল হলো। তাই অফিসের বস আজ তাড়াতাড়ি সবাই কে ছুটি দিয়ে দিল। দুপুরের পরেই জয় অফিস থেকে বের হয়ে গেল। বের হয়ে অফিসের পাশেই "কড়াইগোস্ত" রেষ্টুরেন্ট এ গেল এক কলিগ কে সাথে নিয়ে। দুজনে একসাথে খেয়ে বের হল। কলিগ কে বিদায় করে বাসার দিকে রওয়ানা হল।
হঠাৎ জয়ের মনে পড়ল আম্মু জয়ের খাবার এর জন্য লাবণ্যদের বাসায় বলে গিয়েছে।

লাবণ্য দের সাথে এখন জয়দের পরিবারের গলায় গলায় ভাব। লাবণ্যর আম্মু তো জয় কে খাবার দেয়ার কথা শুনে খুশিই হল। এটা অবশ্য জয় পুরোপুরিভাবে জানেনা।

জয় বাসায় আসতেই গেটে লাবণ্যরর সাথে দেখা। জয় লাবণ্য কে দেখেই চমকে উঠল। লাবণ্যও জয় কে আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে অবাক হল। কিন্তু মনে মনে সে খুশিই হল।

লাবণ্যঃ Hi Mr. Joy Gopal. Today you are so fast. Any problem?  Are you ok?

জয়ঃ জ্বী। আমি ঠিক আছি। এমনি তে আজ কাজ ছিলনা বলে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।

লাবণ্যঃ বুঝলাম। লাঞ্চ করেছেন?

জয়ঃ জ্বী। করেছি।

লাবণ্যঃ (রেগে) কেন? বাহিরে কেনো করেছেন?  আপনার আম্মু বলে যায়নি আমাদের বাসায় খাওয়ার জন্য?

জয়ঃ জ্বী। কিন্তু আমার মনে ছিলনা। তা........

জয় কে আর কিছু বলতে না দিয়ে

লাবণ্যঃ মনে থাকে টা কি? এই যে শুনেন রাতে যদি এই ভুল করেন তবে আপনার খবর আছে বললাম। বুঝলেন?

জয়ঃ আচ্ছা।

জয় বাসার ভেতর চলে গেল, আর লাবণ্য বাহিরে বের হল।

জয় ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুম এর সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে।

কোনো কিছু আজ জয়ের দেখতে ভালো লাগতেছে না। আজ লাবণ্যরর কথা গুলো মনে হচ্ছে কেবল। এই মেয়েটার এমন রাগী স্বভাব আর যেভাবে জয়কে কথায় কথায় ধমকি দেয়। প্রথম প্রথম জয়ের কাছে বিরক্ত লাগত। এখন খুব ভালো ই লাগে। কিন্তু কেনো এই মেয়েটার সব কিছুই ভালো লাগে। অফিসে যখন কাজ করে মাঝে মাঝে লাবণ্যর কথা মনে হয়। আর তখনি সে কাজ গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু এমন তো আগে কখনো হয়নি? তাহলে..........
আর ভাবতে পারলো না।।

হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজে জয়ের সম্বিত ফিরে এলো। কি ভাবছে এগুলো?

এইসময় কে এলো আবার। কেও তো আসার কথা না। দরজা খুলেই লাবণ্য কে দেখে জয় চমকে উঠল। এক্ষুনি এর কথা ভাবতেছে আর সে এসে একদম দরজায় উপস্থিত। জয় কিছু বলতে পারল না। তাকিয়ে আছে লাবণ্যর দিকে।
তখনি লাবণ্যর লড়ি মার্কা চিৎকার।

লাবণ্যঃ কি ব্যাপার বাহিরে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকব?

জয়ঃ আচমকা এসো এসো। তুমি না বের হলে?

লাবণ্যঃ বের হয়েছি। আবার ফিরে এসেছি। কেন আসলে কি অসুবিধা নাকি? আর আপনার অসুবিধা হলে ও আমার কিছু করার নাই। বুজলেন?

জয়ঃ হুঁ বুঝলাম।

লাবণ্যঃ তা আপনার বাসায় এসেছি আপনি কিছু খেতে অফার করবেন না। আমার খিধা লেগেছে অনেক।

জয়ঃ কফি খাবে?

লাবণ্যঃ আপনি কফি বানাতে পারেন?

জয়ঃ হুঁ পারি।

লাবণ্যঃ খাব। বানিয়ে আনুন।

জয় রান্নাঘরে গিয়ে ২ মগ কফি বানিয়ে আনলো। লাবণ্যরর সামনের সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে কফি খেতে লাগলো।

কফি খাওয়া অর্ধেক শেষ হলে টেলিফোন বেজে উঠে। জয় লাবণ্য কে বসিয়ে টেলিফোন ধরতে গেলে লাবণ্য জয়ের কফির মগের সাথে নিজের টা পালটে নেয়। জয় এটি খেয়াল করেনি। ওইদিকে টেলিফোন করেছিল জয়ের মা। জয় কি করছে, খেয়েছে কিনা খোজ খবর নিচ্ছে। টেলিফোন শেষ করে জয় এসে আবার কফি খেতে লাগলো। দেখলো লাবণ্য খুব খুশি। জয় বুঝতে পারলো না এত খুশির কারন কি? কফি খাওয়া শেষ করে জয় লাবণ্য কে কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি

লাবণ্য বলে উঠলঃ আমি এখন যাচ্ছি, আমার অনেক কাজ আছে।  আর রাত্রে তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। বুঝলেন?

জয় কেবল মাথা নেড়ে সায় দিল।

টিভি দেখতে দেখতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেল জয় খেয়াল ই করে নি। সন্ধ্যায় জয় ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে গেল। মাঝে মাঝে ই আসে সে। আজ মনটা অন্যদিন এর চাইতে অনেক ভালো। লাবণ্য কে তার চারপাশ এ অনুভব করতেছে। এমন টা আর কখনো হয় নি। গত কয়েক দিন ধরে লাবণ্য যেন জয় এর মনের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে। লাবণ্যর জন্য জয়ের মনের ভেতর একটা ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছে।

আজ জয় ছাদের একপাশে বসার জায়গা আছে সেখানে বসে একটা সিগারেট খাচ্ছে।  এমনি তে জয় সিগারেট খায় না, তবে যখন খুব মন ভালো থাকে তখন খায়। মারিয়া অবশ্য একদিন দেখেছে জয় কে সিগারেট খেতে। কিছু বলে নি। কারন তার ভাইয়ের আর কোনো খারাপ অভ্যাস নেই।

জয় বাগানের দিকে তাকিয়ে বসে সিগারেট খাচ্ছে। হঠাৎ অনুভব করল কেউ তার হাতের সিগারেট টা টান দিয়ে নিয়ে নিলো। জয় পেচনে তাকিয়ে দেখলো লাবণ্য ই সিগারেট ধরে টান দিয়েছে। সে দেখলো সিগারেট লাবণ্যর মুখে। লাবণ্য সিগারেট টান দিতেই খুব কেশে উঠলো। 
ধোঁয়া চারদিক ছড়িয়ে পড়ল।
এইবার জয় রেগে গেল,

জয়ঃ (রেগে) কি সমস্যা তোমার। তুমি সিগারেট নিয়েছ কেন?

এইদিকে লাবণ্য কেশেই চলছে। জয়ের রাগ এবার চলে গেল। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। আচমকা সে লাবণ্য কে বুকে টেনে নিলো। বুকের সাথে জড়াতেই একটা অজানা সুখ এসে জয়ের কাছে ধরা দিলো। মনে হলো দুনিয়ার সব সুখ বুঝি এখন তার কাছে। তারপর বুকে জড়ানো অবস্থায় ই,

জয়ঃ তুমি সিগারেট খেলে কেন?

লাবণ্যঃ আপনি খাচ্ছিলেন

তাই।

জয়ঃ আমি খেলে কি তোমাকে ও খেতে হবে?

লাবণ্যঃ হ্যাঁ হবে।

জয়ঃ আর কখনো এসব হাতে ও নিবে না।

লাবণ্যঃ কেনো?

জয়ঃ এগুলো খেতে হয় না।

লাবণ্যঃ যা আমি খেতে পারব না তা আপনি ও খেতে পারবেন না।

জয়ঃ কেন?

লাবণ্যঃ আমার পছন্দ না তাই।

জয়ঃ তোমার পছন্দ কি আমাকে মানতে হবে?

লাবণ্যঃ হবে।

জয়ঃ কেনো?

লাবণ্যঃ কারন আপনাকে আমার পছন্দ তাই।

এই কথা বলে লাবণ্য হঠাৎ করে জয়ের বুক থেকে সরে যায়।

লাবণ্যঃ আমাকে একা পেয়ে জড়িয়ে ধরা হচ্ছে তাই না। আমি কিছু বুঝিনা?

জয় এবার লজ্জা পেলো।
কিছু বল্ল না।

লাবণ্যঃ থাক থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। রাতে তাড়াতাড়ি খেতে আসবেন বুঝলেন?  আমাকে যেন আর না আসতে হয়!

জয় কিছু না বলে কেবল মাথা নাড়ল।

লাবণ্য আর পিচনে ও তাকায় নি।

জয় ভাবতে লাগলো কাজ টা কি ঠিক করলাম? এভাবে জড়িয়ে ধরা টা তার উচিত হয় নি। রাতে গেলে একবার সর‍্যি বলে আসবে।

রাত ৯ টা।

জয় গিয়ে লাবণ্যদের দরজার কলিংবেল চাপলো। ভেতর থেকে কে যেন সাথে সাথেই বল্ল আসতেছি। (যেন এতক্ষণ জয়ের জন্য ই অপেক্ষা করছিল)
গলার আওয়াজ শুনেই জয় বুজতে পারলো ওটা লাবণ্য এর গলা। কিন্তু এখন লাবণ্যরর গলা যেন পাল্টে গেছে। এত মিষ্টি গলার আওয়াজ।  কিন্তু লাবণ্য তো সব সময় চেচিঁয়ে কথা বলে। তাহলে এখন এমন সুন্দর করে কে কথা বলল?

হঠাৎ করেই দরজা খুলে গেল।

জয় আশা করছিল নিশ্চয় এখন এজটা ধমক খাবে। কিন্তু দরজারর ওপারে লাবন্য কে দেখেই সে চমকে উঠল। এযেন একটা পরী দাড়িয়ে আছে। লাবণ্য একটা সবুজ শাড়ী পরে, মাথার চুল গুলো ছেড়ে, কপালে একটা ছোট কালো টিপ তার সামনে দাড়ানো। মুখে কিছুটা লাজুক হাসি। খুবই অসাধারণ দেখাচ্ছে। জয় অনেকক্ষণ ধরে লাবণ্যরর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না। চোখের পলক ও ফেলেনি অনেক্ষণ। সে যেন স্বপ্ন দেখছে।

তারপর,

লাবণ্যঃ আগে ভেতরে আসুন, তারপর মন ভরে দেখবেন।

জয় এবার সম্বিত ফিরে পেয়ে বল্ল, Sorry.

লাবণ্যঃ It's ok. You are most welcome. let's come inside. I am waiting for you.

জয়ঃ Oh yes.

জয় কে সোফায় বসতে দিয়ে লাবণ্য রান্নাঘর এর দিকে গেলো। আজ লাবণ্য নিজ হাতে সব রান্না করেছে।  সে  ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে জয়কে ডাক দিলো। জয় উঠে টেবিল এর সামনে গেল। লাবণ্য জয়কে একটা চেয়ার টেনে দিল।

জয় বসতে বসতে বললঃ আঙকেল, আন্টিরা কোথায়? উনাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না যে?

লাবণ্যঃ উনারা তো আজ বাসায় নেই। আব্বুর ফ্রেন্ড এর আজ মেরেজডে। উনারা ওখানে গেছে। আসতে রাত হবে।

জয়ঃ ও।

(আজ জয় খুব অবাক হচ্ছে লাবণ্যর কথায়। যে মেয়েটা কথায় কথায় ধমক   দেয় সে কি করে এত মিষ্টি করে কথা বলছে?)

জয় খেতে বসল। লাবণ্য জয়কে খাবার বেড়ে দিতে লাগল। জয় কিছুটা লজ্জাবোধ করছে লাবণ্যর সামনে খেতে।

লাবণ্য বুঝতে পেরে বললঃ  আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? তাহলে আমি ওইদকে সরে যাচ্ছি।

জয়ঃ না না। তুমি এখানে থাক। আমার খুব ভালো লাগছে।

লাবণ্যঃ তাহলে আরেকটু দেই।
লাবণ্য আরেকটু Fried Rice, Chicken Fri  আর Fried Swan বেড়ে দিলো।
জয় তার প্রিয় খাবার গুলো এখানে দেখে খুব অবাক হল। লাবণ্য কি করে জানে সে এগুলো পচন্দ করে?

কিন্তু কিছু বলল না।

লাবণ্যর সামনে বসে খেতে এমনি তেই সে নার্ভাস ফিল করছে, তার উপর এই মেয়েটা যা রাগী কখন আবার ধমকি দেয়। তাই সে কোনো কথা না বলে খাওয়া শেষ করল।

লাবণ্য হাত মোচার জন্য তোয়ালে এগিয়ে দিলো।  জয় খাওয়া শেষ করে উঠলে লাবণ্য তাকে সোফায় বসতে বলল। জয় এসে বসলে লাবণ্য তাড়াতাড়ি টেবিল গুছিয়ে নিয়ে সোফায় এসে বসল।

জয়ঃ তুমি খেলে না কেনো?

লাবণ্যঃ আপনি খাইয়ে দেন নি তাই।

জয়ঃ আমার হাতে কি তুমি খেতে?

লাবণ্যঃ একবার দিয়েই দেখতেন।

জয়ঃ Sorry আমি আসলে একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম তাই.........

লাবণ্যঃ আর বলতে হবে না মিস্টার। আমি সব বুঝি।

জয়ঃ কি বুঝ?

লাবণ্যঃ যা দরকার তাই।

জয়ঃ আমাকে বলবেনা?

লাবণ্যঃ সময় হোক।

জয়ঃ সময় কি হবে?

লাবণ্যঃ হতে ও তো পারে?

জয়ঃ দেখি হয় কিনা?

লাবণ্যঃ খাবার কেমন হলো বললেন না যে?

জয়ঃ অসাধারণ।
এগুলো কে রান্না করেছে?

লাবণ্যঃ আমি।

জয়ঃ তুমি এত ভালো রান্না ও করতে পারো?

লাবণ্যঃ কিছুটা পারি।

জয়ঃ পুরটাই তো পারো দেখছি।

লাবণ্যঃ চেষ্টা করেছি কেবল।

জয়ঃ ধন্যবাদ। একটা কথা বলতে পারি?

লাবণ্যঃ হুঁ

জয়ঃ আমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ানোর কারন জানতে পারি?

লাবণ্যঃ পারেন।

জয়ঃ কি?

লাবণ্যঃ আপনাকে আমার পছন্দ তাই।

লাবণ্য এই কথা বলে নিজেই খুব লজ্জা পেল। আর কিছু বলতে পারলো না। জয় ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। দুজনেই অনেক্ষন চুপ করে বসে থাকল। তবে আজ জয় লাবণ্যর দিক থেকে যেন চোখ ফেরাতেই পারছে না। কিন্তু লাবণ্য লজ্জায় লাল হয়ে আছে। জয় যেন আজ অন্য লাবণ্য কে দেখছে। যে সবার থেকে আলাদা। কিন্তু এতদিন ধরে জয়ের ধারণা ছিল লাবণ্য খুব বদমেজাজী। জয় এই প্রথম লাবণ্য কে লজ্জা পেতে দেখেছে। লাবণ্য রাগ করলে যত সুন্দর লাগে লজ্জা পেলে তার ছাইতে বেশি সুন্দর লাগে। আর আজ সবুজ শাড়ী পরাতে তাকে তো স্বর্গের অপ্সরীর মত দেখাচ্ছে। জয় কোনো দিন কোনো মেয়েকে এভাবে দেখেনি। তাছাড়া সে মানুষের সাথেও কম মিশে। মেয়েদের সাথে তো একেবারেই না। কিন্তু আজ লাবণ্যর দিক থেকে সে চোখই ফেরাতে পারছে না। ভালো লাগার একটা অজানা শিহরণ হয় অনুভব করছে খুব কাছ থেকে।
জয়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবন্য আরো বেশি লজ্জিত হল। সে লজ্জাতে লাবণ্য কে আরো অপরুপ দেখাচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ সময় কেটে  কেউ খেয়াল করে নি।

রাত ১১ টা।
জয় এসেছিল ৯ টার সময়।
হঠাৎ সময়ের দিকে চোখ পরতেই জয় চমকে গেল। ২ ঘন্টা সময় কখন কেটে গেল বুঝতেই পারল না।

সম্বিত ফিরে এলেই জয় বলল, এবার তো ফিরতে হবে। তুমি শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি চলে যাচ্ছি এখন। সকালে আবার অফিস আছে।

লাবণ্যঃ ঠিক আছে আসুন। সকালে এখানে খেয়ে অফিস যাবেন বুঝলেন?

জয়ঃ ওকে।

লাবণ্য জয় কে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। তারপর জয় ঘরে ঢোকা পর্যন্ত সে তাকিয়ে থাকল।

জয় ঘরে ঢুকতে গিয়ে পেচনে তাকিয়ে বলল Good Night.

লাবণ্যঃ Good Night.

পরদিন সকাল,

জয় অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে লাবণ্য দের বাসায় গেল। ঘরে ডুকতেই লাবণ্যরর আম্মু আব্বুকে দেখলো। উনারা ও টেবিলে বসা ছিল।

জয়ঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা?

লাবণ্যরর বাবাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছি আমরা। তুমি ভালো আছো। বস।

লাবণ্য জয়কে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।
জয় বসতে বসতে,

জয়ঃ জী আংকেল আমি ও ভালো আছি। রাতে এসেছিলাম আপনারা বাসায় ছিলেন না।

লাবণ্যর বাবাঃ থাকতে না পারার জন্য আমি খুব  দুঃখিত বাবা। আসলে একটু বাহিরে যেতে হয়েছিল। তাই থাকতে পারিনি। তুমি কিছু মনে করনি তো?

জয়ঃ না না। আমি কিছু মনে করিনি।

পাশে লাবণ্য চিৎকার করে বলে উঠল,

লাবণ্যঃ কিছু মনে করলে তো একদম মাথা পাঠিয়ে দিতাম।

লাবণ্যর আম্মুঃ ছিঃ লাবণ্য। এভাবে কেউ কাওকে বলে?

লাবণ্যঃ আমি তো বলছি।

(জয় তো লাবণ্যর কথা শুনে হতবাক। কাল রাতে সে যে লাবণ্য কে দেখেছে এ কি সেই লাবণ্য?)

জয় কিছু বলল না। লাবণ্যর দিকে শুধু তাকালো একবার। দেখলো লাবণ্য ও জয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে। লাবণ্য কে হাসতে দেখে জয় ও হেসে দিল। কিন্তু লাবণ্যর দিকে তাকাতেই জয়ের হাসি থেমে গেল। লাবণ্য জয়কে হাসতে দেখে একটু অবাক হল। এই প্রথম সে জয় কে তার সামনে হাসতে দেখল। জয় বুঝতে পেরে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।

সবাই একসাথে বসে খাওয়া শেষ করল। জয় এতক্ষণ এ একবার ও লাবণ্যর দিকে তাকায় নি। আসলে তাকাতে সাহস পায় নি। এই বদমেজাজি মেয়েটা আবার কি বলে বসে তাই। খাওয়া শেষ করে জয় লাবণ্য এর আব্বু আম্মুকে বলে অফিস এর জন্য বেরিয়ে গেল। কিন্তু লাবণ্য কে দেখতে পেল না। সে এদিক ওদিক চেয়ে বেরিয়ে গেল। বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখল লাবণ্য একদম বাড়ির গেটে দাঁড়ানো। জয় দেখে চমকে গিয়ে বলল,

জয়ঃ তুমি এখানে কখন এলে। আমি উপরে তোমাকে খুজছিলাম।

লাবণ্যঃ কেন?

জয়ঃ এমনি।

লাবণ্যঃ এমনি কেউ কাউকে খুঁজে নাকি?

জয়ঃ না মানে.......

লাবণ্যঃ আর মানে মানে বলতে হবে না। এইযে শুনেন আজ অফিস থেকে

তাড়াতাড়ি আসবেন। আমি একটু শপি করব। আপনি আমার সাথে যাবেন।

জয়ঃ আমাকে কেন যেতে হবে?

লাবণ্যঃ আমি বলছি তাই।

জয়ঃ আমার অফিসে কাজ আছে আজ।

লাবণ্যঃ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আসবেন।

জয়ঃ Sorry

লাবণ্যঃ আপনি না আসলে আমি আপনার অফিসে এসে আপনাকে ধরে নিয়ে যাব।

জয়ঃ কি বলেন?
(জয় এবার তাকয়ে দেখছে লাবণ্যরর দিকে। লাবণ্য ও নির্ভিক ভাবে তাকিয়ে আছে। জয় আর কিছু বলল না। শুধু মাথা নাড়ল। জয় বুঝতে পারল এই মেয়ের সব ই করতে পারবে। সে বেরিয়ে গেলো। রিক্সা ডেকে অফিসের দিকে চলে গেলো। লাবণ্য ও বাসায় চলে আসলো। সে আজ অনেক অনেক খুশি।)

Comments

আপনার সু-চিন্তিত মতামত জানাবেন।

Dark Template